ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উত্তর/উত্তর-পূর্ব ওশেনিয়া অঞ্চলের অন্তর্গত এবং ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী অবস্থানে নিরক্ষরেখা বরাবর সমুদ্রে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জীয় রাষ্ট্র। দেশটি মালয় দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। পাঁচটি বৃহৎ দ্বীপ দেশটির প্রায় ৯০% আয়তন গঠন করেছে। এগুলি হল সুমাত্রা, জাভা, সুলাওয়েসি, বোর্নিও দ্বীপের দক্ষিণ তিন-চতুর্থাংশ (কালিমান্তান) ও নিউ গিনি দ্বীপের পশ্চিম অর্ধাংশ (পাপুয়া)। ছয় হাজারেরও বেশি দ্বীপে মানববসতি আছে। পূর্বে সুমাত্রা থেকে পশ্চিমে নিউ গিনি পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া প্রায় ৫,১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ, আর উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। আয়তনবিশিষ্ট ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জীয় রাষ্ট্র এবং আয়তনের নিরিখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের ১৪ তম বৃহত্তম দেশ। ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা ২৮ কোটি, ফলে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাধিক জনবহুল, বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ জনবহুল ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল দেশ। জাভা দ্বীপে দেশটির অর্ধেকের বেশি অধিবাসীর বাস; এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দ্বীপ।ইন্দোনেশিয়া একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র যেখানে একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত আইনসভা আছে। দেশটি ৩৮টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত, যাদের মধ্যে নয়টির বিশ্বের স্বায়ত্বশাসন মর্যাদা আছে। দেশটির বৃহত্তম নগরী জাকার্তা বিশ্বের ২য় সর্বাধিক জনবহুল নগর এলাকা। জাকার্তা বর্তমান রাজধানী হলেও অদূর ভবিষ্যতে বোর্নিও দ্বীপে নুসান্তারা নামক একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিকল্পিত শহরে রাজধানী স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি চলমান আছে। এছাড়া সুরাবায়া, বানদুং, মেদান ও বেকসাই আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। ইন্দোনেশিয়ার সাথে পাপুয়া নিউ গিনি, পূর্ব তিমুর ও মালয়েশিয়া
ঐতিহাসিক নুসান্তারা বা ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জটি কমপক্ষে সপ্তম শতাব্দী থেকেই বাণিজ্যের জন্য মূল্যবান অঞ্চল হয়ে ওঠে। সেসময় সুমাত্রার শ্রীবিজয় ও পরবর্তীতে জাভার মাজাপাহিত রাজ্যগুলি মূল চীন ভূখণ্ড ও ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। শতাব্দীর পরিক্রমায় স্থানীয় শাসকেরা বিদেশী প্রভাবগুলিকে আত্মীকরণ করে নেয়, ফলে এখানে ৭ম থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজ্যের বিকাশ ঘটে। পরবর্তীতে ১৩শ শতক থেকে সুন্নি মুসলমান ব্যবসায়ী ও সুফি পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে ইসলাম ধর্মের প্রচলন ঘটে (বালি দ্বীপ বাদে)। আবিষ্কারের যুগে ইউরোপীয় শক্তিগুলি (পর্তুগিজ, ইংরেজ, ওলন্দাজ, ইত্যাদি) মালুকু দ্বীপপুঞ্জের মসলা দ্বীপগুলির সাথে বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য লাভের লক্ষ্যে একে অপরের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। ১৭শ শতাব্দীর শেষভাগে এসে ওলন্দাজরা প্রায় সবগুলি দ্বীপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তখন অঞ্চলটির নাম ছিল ওলন্দাজ ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ (ডাচ ইন্ডিজ)। এরপর প্রায় সাড়ে তিনশত বছর ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক শাসন বজায় থাকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানিদের আক্রমণে ১৯৪২ সালে এর অবসান হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানিরা আত্মসমর্পণ করলে ওলন্দাজরা আবার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলেও ১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা-উত্তর ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস মসৃণ নয়, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (২০০৪-এর সুনামি উল্লেখ্য), দুর্নীতি ও দেশের কিছু কিছু অংশে সন্ত্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদের সংকট, গণতান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়া ও একাধিক দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিযুক্ত পর্বের সম্মিলন ঘটেছে। ১৯৬৫ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকার্নোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর সামরিক শাসক সুহার্তো তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা ধরে রাখেন এবং ১৯৯৮ সালে জনবিদ্রোহের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়াতে হাজার হাজার স্বতন্ত্র দেশজ নৃগোষ্ঠী ও শতশত ভাষিক গোষ্ঠী বাস করে, যাদের মধ্যে জাভাদ্বীপীয় জাতির লোকেরা সর্ববৃহৎ। পশ্চিম দিকের দ্বীপবাসীদের আদি উৎস পূর্ব এশিয়া, আর পূর্ব দিকের দ্বীপবাসীরা মূলত মেলানেশীয় বা ওশেনীয় উৎস থেকে আগত। তবে এদের মধ্যে একটি অংশিদারি পরিচয় গড়ে উঠেছে, যা ইন্দোনেশিয়ার মূলমন্ত্র "ভিন্নেকা তুংগাল ইকা-তে ("অনেক, কিন্তু এক") প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় ভাষা ইন্দোনেশীয় ভাষা, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ধর্মের বহুত্বের প্রতি সহনশীলতা এবং উপনিবেশবাদ ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইতিহাস এই বিচিত্র সব মানুষকে একই পরিচয়ে আবদ্ধ করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি নামিক স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতাভিত্তিক স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম অর্থনীতি। ধান প্রধান খাদ্যশস্য এবং কৃষিখাতে শ্রমশক্তির প্রায় ৪০% নিয়োজিত। অর্থকরী ফসলের মধ্যে রবার, পাম তেল, আখ, কফি ও নারিকেল উল্লেখ্য। দ্বীপগুলিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেলের মজুদের পাশাপাশি বক্সাইট, তামা, নিকেল, টিন, রূপা ও সোনার খনি আছে। দ্বীপগুলিকে বেষ্টনকারী সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ আহরণ করা হয়। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্র, একটি আঞ্চলিক শক্তি এবং বিশ্বমঞ্চে একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে পরিগণিত। দেশটি একাধিক বহুপাক্ষিক সংস্থার সদস্য, যাদের মধ্যে জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও জি২০ উল্লেখ্য। এছাড়া এটি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের সংস্থা আসিয়ান, পূর্ব এশিয়া সামিট, ডি-৮ অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা এপেক এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উইকিপিডিয়া দ্বারা উপলব্ধ
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
13
14
15
16
17
18
19
20